শেকসপিয়রঃ একজন মহানাট্যকারের জীবন
- Posted by classbus
- Categories বিখ্যাত মনীষী
- Date April 23, 2022
- Comments 0 comment

ইংল্যান্ডের অ্যাভন নদীর সাথে বিস্তৃত মাঠের ব্যপ্তি যেখানে দেখা যায় তার নাম স্টাটফোর্ড। এই স্টাটফোর্ডের ছোট্ট শহর আপন অ্যাভন এর বাসিন্দা ছিলেন জন শেক্সপিয়ার এবং তার স্ত্রী মেরী শেক্সপিয়ার। জন শেক্সপিয়ার ছিলেন তৎকালীন স্টাটফোর্ডের ওল্ডারম্যান বা পৌরজন। তাঁর হাতে শোভা পেত সম্মানসূচক “ওল্ডারম্যান রিং” বা “পৌরজনের আংটি”। এ দম্পতির ১ম চার সন্তানের মৃত্যুর পর যে সন্তান তাদের ঘর আলো করে আসে, সে শুধু তার সমকাল অতিক্রম করেনি, বরং হয়ে উঠেছিলো পুরো জাতির গর্বের বিষয়। বলছি উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের কথা। যিনি ইংরেজ সাহিত্যের মহাকবি, মহা নাট্যকার। তিনি ইংল্যান্ডের জাতীয় কবি এবং তাঁর উপাধি ” Bard Of Avon”. বলা হয়ে থাকে প্রতিটা শিশুর ভেতরই বিকশিত হয় তাঁর পিতামাতার আদর্শ। শেক্সপিয়ার ও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। তাঁর বাবা জন শেক্সপিয়ার ছিলেন ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী। পরবর্তীকালে শেক্সপিয়ারের বহু নাটকে এ ধর্ম বিশ্বাসের কথা উঠে এসেছে। তাঁরই রচিত নাটক “রাজা চতুর্থ হেনরী-১ম পর্ব” যখন ইংল্যান্ডে মঞ্চায়ন হয় তখন সে নাটকে চরিত্র স্টাফকের যুবরাজ হালকে রাজা পঞ্চম হেনরীকে বলতে শোনা যায়, “আমি যখন ছোট ছিলাম তখন এতোই চিকন ছিলাম যে ওল্ডারম্যানের আংটির ভেতর দিয়ে ঢুকে যেতাম।” যেহেতু শেক্সপিয়ারের বাবা ছিলেন তৎকালীন ওল্ডারম্যান, সুতরাং বোঝা যায়, তাঁর বাবার প্রভাব তাঁর জীবনে কতটুকু জায়গা জুড়ে ছিলো। এ মহান নাট্যকার ১৫৬৪ সালের ২৩ শে এপ্রিল জন্ম গ্রহণ করেন। সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো, তাঁর মৃত্যু তারিখও ২৩শে এপ্রিল। যদিও তাঁর জন্ম তারিখ নিয়ে অনেক দ্বিমত আছে। তবে তৎকালীন ইংল্যান্ডে শিশু জন্মের পর স্থানীয় চার্চে ব্যপ্টিজম করা হতো। স্থানীয় চার্চ হলি ত্রিনিটিতে ১৫৬৪ সালের ২৬ এপ্রিল তাঁর ব্যপিস্ট করার কথা উল্লেখ আছে। আর এ ব্যপ্টিজম করা হতো শিশু জন্মের তিন দিন পর। সে হিসাবে তাঁর জন্ম তারিখ ২৩ শে এপ্রিল। তাঁর জন্মস্থান আপন অ্যাভন শহরেই তাঁর ছেলেবেলা অতিবাহিত হয়। তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয় স্থানীয় নিম্ন প্রাইমারী স্কুলে। তারপর তিনি ভর্তি হন Kings New School এ। সেসময় স্কুলগুলোতে শুধু গ্রিক আর ল্যাটিন শিক্ষা দেওয়া হতো। মাত্র ১৮ বছর বয়সে ১৫৮২ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর পাশের গ্রামের মেয়ে এন হ্যাতাও ছিলেন তাঁর স্ত্রী, যিনি শেক্সপিয়ার থেকে ছয় বছরের বড় ছিলেন। তাঁদের ঘরে ১টি মেয়ে ও ২টি জমজ ছেলের জন্ম হয়। মেয়ের নাম ছিল সুসানা আর ছেলেদের নাম ছিল হ্যামলেট ও যুদিথ। যদিও যমজ ছেলেরা তাঁর জীবদ্দশায় মৃত্যুবরণ করে। তাঁর সাহিত্য জীবন বা কর্মজীবনের সূচনা ঘটে আনুমানিক ১৫৮৫ থেকে ১৫৯২ সালের ভেতর। তাঁর বেশীরভাগ সাহিত্যকর্ম রচিত হয় ১৫৮৯ থেকে ১৬১৩ সালের ভেতর। তিনি শুধু একজন নাট্য রচয়িতা ছিলেন না, তিনি অভিনেতাও ছিলেন। তাঁর নাট্যদলের নাম “Lord Chamberlain’s Men”. ১৫৯৪ সাল থেকে শেক্সপিয়ারের বেশীরভাগ নাটকই এ নাট্যদলের প্রযোজনায় মঞ্চায়িত হয়। ১৬০৩ সালে রাণী এলিজাবেথ মারা যাওয়ার পর ক্ষমতায় আসেন রাজা প্রথম জেমস। যিনি শেক্সপিয়ারের নাট্যদলকে পুরষ্কারে ভূষিত করেন এবং তখন থেকে এ নাট্যদলের নাম হয় ” King’s Men”. ৩৮টি নাটক, ১৫৪টি কবিতা ও ২টি দীর্ঘ আখ্যানের রচয়িতা শেক্সপিয়ার তাঁর নাট্য জীবনের সফলতার ফলস্বরূপ জীবদ্দশায় হয়ে ওঠেন লন্ডনের অন্যতম ধনী ব্যক্তি। ১৫৯৭ সালে তিনি স্টাটফোর্ডের ২য় বৃহত্তম বাড়িটি ক্রয় করে নেন। অবসর জীবনের পর ১৬১৩ সাল থেকে লন্ডন ছেড়ে এ বাড়িতেই স্থায়ী বসবাস শুরু করেন এবং জীবনের শেষদিনগুলো তিনি এখানেই অতিবাহিত করেন। ১৬১৬ সালের ২৩শে এপ্রিল স্টাটফোর্ডেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
শেক্সপিয়ার মধ্যযুগের জীবনকে চিত্রায়িত করেছেন জীবনের মাধুর্য দিয়ে। কখনও তিনি দর্শকে হাসিয়েছেন, তবে বেশীরভাগ সময়ে তিনি কাঁদিয়েছেন নাটকে বিরহ জীবনের গল্পে। তাই তাঁর বেশীরভাগ নাটকই ট্রাজেডিমূলক। এ ধরনের নাটকের ভেতর আছে হ্যামলেট,রোমিও-জুলিয়েট, কিং লিয়ার, ম্যাকবেথ ইত্যাদি। যেগুলো তাঁর সমকালকে অতিক্রম করে আজও শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসে আছে ইংরেজি সাহিত্যে। শেক্সপিয়ার জীবনকে গভীরভাবে শুধু উপলব্ধিই করেননি, তিনি মহাকালকে অতিক্রম করেছেন তাঁর গভীর জীবনবোধ দিয়ে। এখানেই তিনি আজও স্থান করে আছেন প্রতিটা সমভাবাপন্ন মানুষের হৃদয়ে। আজও মানুষ শেক্সপিয়ার নামটা স্মরণ করলেই তাঁর চোখের সামনে ভেসে ওঠে রোমিও-জুলিয়েটের অমর প্রেম কিংবা ম্যাকবেথের গভীর বিরহের আভাস। কয়টা মানুষ তাঁর সৃষ্টি দিয়ে যুগ অতিক্রম করে আপন আভায় মিশে যায় প্রতিটা যুগের তালে সময়ের সাথে, শেক্সপিয়ার পেরেছিলেন অথবা সমসাময়িককালে তিনি পারছেন। এজন্য বলা হয়ে থাকে শেক্সপিয়ারকে নিয়ে যত গবেষণা এ পৃথিবীতে হয়েছে তাঁর অর্ধেকও অন্য কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে হয়নি। তাঁর প্রতিটা চরিত্র, প্রতিটা সংলাপ, প্রতিটা কবিতাই গবেষণার প্রতিপাদ্য। এখানেই তিনি ব্যতিক্রম, এখানেই তিনি সব থেকে শ্রেষ্ঠ!
Tag:বিখ্যাত মনীষী