গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, মুজিবনগর
- Posted by Mosaddek Bin Shorif
- Categories Bangabandhu & Bangladesh Studies
- Date April 17, 2022
- Comments 0 comment

সময় ১৯৭১ ।
২৫ শে মার্চ গনহত্যার পরে পাক হানাদার বাহিনীর চোখ তখন বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়ির দিকে ।
সারা শহর হত্যালীলার পরে তারা বঙ্গবন্ধুকে ধরে নিয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানে, এর আগেই ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন । একটি শোষণমুক্ত স্বাধীন দেশের আশায় স্বাধীনতার ডাক দিয়ে যান ।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আওয়ামী নেতারা একত্রিত হন কলকাতার ৮নং থিয়েটার রোডে ।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে ঝাপিয়ে পরে দেশের সর্বস্তরের মানুষ । শুরু হয় যুদ্ধ, স্বাধীনতার যুদ্ধ।
স্বাধীনতা যুদ্ধকে সংগঠিত করা, যুদ্ধের গতিপথ নির্ধারণ করা, বৈদেশিক সাহায্য নিশ্চিত করা, শত্রুপক্ষের ষড়যন্ত্রকে প্রত্যাঘাত করা, বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিসহ, বহিঃ বিশ্বে স্বীকৃতি আদায় করার জন্য প্রয়োজন পরে একটি সংগঠিত সরকার ব্যবস্থার ।
মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে জাতীয় চার নেতাকে কেন্দ্র করে ১০ই এপ্রিল, ১৯৭১ গঠন করা হয় মুজিবনগর সরকার । ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়।
আজ থেকে ৫১ বছর আগের এই দিনে , ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ ।
শপথ গ্রহণ করেন পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীনতাকামী নতুন একটা দেশের নয়া একটা সরকার , বাংলাদেশের প্রথম সরকার , মুজিবনগর সরকার ।শপথ গ্রহণের স্থান হিসেবে বেছে নেয়া হয় ভারত সীমান্তের কাছে মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার একটি আমবাগান। স্বাধীন বাংলাদেশের সূতিকাগার এই জায়গার পূর্বনাম মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল এই জায়গার নামকরণ করা হয় ‘মুজিবনগর’। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর ৮ নং সেক্টরে অবস্থিত ছিলো । তখনও বাতাসে গুঞ্জন হানাদারেরা বুঝি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ফেলেছে , কেউ কেউ বলছে কারাগারে। বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ গর্বের সঙ্গে এই নামকরণ করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করে , বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম । বঙ্গবন্ধুর পাশে ফাইল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা, ভুট্টোর ভাষায় যিনি ছিলেন ভয়ংকর; সেই তাজউদ্দিন আহমেদ শপথ গ্রহন করেন বাংলাদশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে । অর্থ বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়ভার নেন আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতা এম মনসুর আলী । স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ, পুনর্বাসন ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে বসেন এএইচএম কামারুজ্জামান । আওয়ামী মন্ত্রিসভার ঘৃণিত ব্যক্তি যিনি কিনা পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে অতোপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন সেই খন্দকার মোশতাক ও শপথ নেন মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভায়, তার কাঁধে দায় পরে পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ সামলাবার ।
জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী অস্থায়ী সরকারের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার ও মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন।
মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী গ্রাম বৈদ্যনাথতলায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবদুল মান্নান এমএনএ ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী এমএনএ। পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেছিলেন ১৭ বছরের কিশোর মো. বাকের আলী।
কলকাতায় পাকিস্তানের উপ-দূতাবাসে উপ-হাইকমিশনার পদে ছিলেন বাঙালি অফিসার হোসেন আলী।
প্রবাসী সরকার গঠনের পরপরই হোসেন আলীর নেতৃত্বে উপ-দূতাবাসে কর্মরত প্রায় ৫০ জন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।
তিনি পাকিস্তানের উপ-দূতাবাসকে স্বাধীন বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে রূপান্তরিত করেন। কলকাতার সেই কূটনৈতিক অফিসটি ছিল বিদেশে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অফিস।
১৮ এপ্রিল ১৯৭১ থেকে পুরোদমে কাজকর্ম শুরু করে মুজিবনগর সরকার। একদিকে শক্তিশালী পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ক্রমশ হিংস হয়ে উঠা অন্যদিকে লাখে লাখে শরণার্থীর চাপ, ভারতের সাথে মৈত্রতা, মুক্তিবাহিনির জন্য ভারতে প্রশিক্ষণ, বৈদেশিক বন্ধুদের থেকে সাহায্য লাভের আকুতি আর ক্রমাগত মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা দেয়ার মাধ্যমেই প্রায় ৯ মাস পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়। একে একে বিজয়বেসে ঘরে ফিরে আসে বাংলার নায়কেরা ।
সফল হয় বাংলাদেশের প্রথম সরকার মুজিবনগর সরকার , কিন্তু তখনো মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগারে বন্দি । ১০ জানুয়ারী ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু নতুন একটি দেশ , বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন । এর আগেই মুজিবনগর সরকারকে স্বীকৃতি দেয় ভারত ও ভুটান ।