মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট রিভিউ
- Posted by classbus
- Categories Subject Review
- Date February 11, 2023

মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট রিভিউ
মনে করো গ্রীষ্মের কোনো এক রোদ্রদীপ্ত দুপুরে তুমি স্কুল থেকে বাসায় আসলা। খেয়াল করলা তুমি প্রচন্ড তৃষ্ণার্ত। তুমি ঝটপট ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে খেয়ে ফেললা। আহা কি শান্তি!
আচ্ছা, এটা খুবই বেসিক একটি ব্যাপার না? কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছো এই সিম্পল ব্যাপারটির পেছনে কি মেকানিজম কাজ করে? এই যে বাক্স টাইপ মেশিন যেটা আমরা ফ্রিজ নামে চিনি, এটা আসলে বানায় কারা? ফ্রিজের মতো এরকম অসংখ্য মেশিন আমারা প্রতিনিয়ত দেখি আমাদের চারপাশে। এসবের নেপথ্যে কি রয়েছে তা নিয়েই আজকের এই লেখা।
আমি কথা বলছিলাম প্রকৌশলবিদ্যার অন্যতম প্রাচীন শাখা যন্ত্রকৌশল বা মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। যাকে “Mother of Engineering ” ও বলা হয়।
আচ্ছা, মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং কি?
“Mechanical engineering is a discipline of engineering that designs, analyzes, manufactures, and maintains mechanical systems by combining engineering physics and mathematical concepts with materials science.”
মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা যন্ত্রকৌশলে, ফিজিক্স এবং ম্যাথস এর একদম বেসিক থিওরিগুলোকে একত্রিত করে সেগুলোকে এপ্লাইড রুপ দেয়া হয়৷ যার সাহায্যে বিভিন্ন মেশিন, সিস্টেম এসব ডিজাইন করা হয় এবং সেই ডিজাইন অনুযায়ী বাস্তবে রুপ দেয়া হয়।
Where it all began?
সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষের মাঝে ইচ্ছে ছিলো দৈনন্দিন জীবনকে পরিবর্তন করা, আরো সহজ করে তোলা। তার তাগিদেই প্রযুক্তির এমন বিবর্তন ও বিপ্লব।
ইঞ্জিনিয়ারিং এর সবচেয়ে পুরোনো ব্রাঞ্চ বা শাখার একটি হলো মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং। এর ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে প্রাচীন গ্রিসে। প্রাচীন গ্রিসেই আবিষ্কার হয় সেই প্রথম স্টীম ইঞ্জিন।এরপর ১২০০ শতাব্দিতে যন্ত্রকৌশলের যাত্রা এক নতুন মাত্রা পায়। ১২০৬ সালে আল-জাজারির লিখা “The book of knowledge of ingenious mechanical devices” বইটি তৎকালীন উদ্ভাবিত বিভিন্ন মেশিন বা মেকানিকাল ডিভাইস সম্পর্কে মাস ক্রাউডের কাছে একটা বিষদ ধারণা প্রদান করে।
মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং তার পূর্নাঙ্গ যাত্রা শুরু করে ১৮০০ শতাব্দির শিল্প বিপ্লবের পরে। ১৮৪৭ সালে যুক্তরাজ্যে শুরু হয় “The Institute of Mechanical Engineers”।
এরপর একে একে আবিষ্কার হলো টারবাইন, বয়লার, কম্প্রেসর থেকে শুরু করে কতো কিছু।
মার্সিডিজ বেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা কার্ল বেঞ্জের বানানো প্রথম গ্যাসোলিন ইঞ্জিন থেকে এই যুগের ” W-16″ ইঞ্জিনের যাত্রাটা ছিলো রোমাঞ্চকর!
What does this subject offer to the world?
আচ্ছা একটু চিন্তা করো তো! আজ থেকে ১০ বছর আগে মানুষের দৈনন্দিন জীবন কেমন ছিল! সেটার সাথে বর্তমানের তুলনা করে দেখো। কি অভাবনীয় চেঞ্জ এসেছে ডেইলি লাইফে! এর পেছনে বড় অবদান আছে ইঞ্জিনিয়ারদের।
মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অতপ্রতভাবে জড়িত। আমাদের চারপাশে আমরা যত ইন্ডাস্ট্রি দেখি, প্রত্যেকটিতেই অসংখ্য মেশিনারি রয়েছে। মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়াররাই এসব ফাংশন করে। এখন, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে সময়ের ব্যবধান এতটা কমে এসেছে, এর পেছনেও রয়েছে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং। রাস্তায় বেরোলে আমরা যত ট্রান্সপোর্ট দেখি এর সবকিছুই এসেছে যন্ত্রকৌশলের কল্যাণে। এই যে সারা দেশে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে, এর একদম মুলে রয়েছে মেকানিকাল ও ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং।
পাওয়ার সেক্টর থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রি,রেলওয়ে সবগুলো সেক্টর মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়া অচল।
কি কি পড়ানো হয় মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ?
মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং খুবই ডাইনামিক একটা সাবজেক্ট। এর পরিধি বিশাল।
চলো দেখে আসি এর বিষয়বস্তু!
#Thermodynamics
#Production Process
#Engineering Mechanics
#Mechanics of Solid
#Measurement,Quality Control and Materials Handling
#Instrumentation and Control
#Fluid Mechanics
#Heat Transfer
#Engineering Materials and Metallurgy
#Design of Machine Elements
#Mechatronics Systems
#Energy Engineering and Technology
#Powerplant Engineering
#Refrigeration and Air Conditioning system
#Aerodynamics
#Automobile Engineering
#Nuclear Engineering
#Computer Aided Design
#Robotics
#Fluid Machinery
এগুলো ছাড়াও ইলেকট্রিকাল, কম্পিউটার সাইন্স, ফিজিক্স, ম্যাথস এর কিছু নন-ডিপার্টমেন্টাল কোর্স থাকে।
মোট ৮টি সেমিস্টার জুড়ে একজন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টকে উপরের বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়।
Where you can study this subject?
আমাদের দেশের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়টি পড়ানো হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো :
#Bangladesh University of Engineering & Technology (BUET)
#Shahjalal University of Science & Technology (SUST)
#Rajshahi University of Engineering & Technology (RUET)
#Khulna University of Engineering & Technology (KUET)
#Chittagong University of Engineering & Technology (CUET)
#Islamic University of Technology (IUT)
#Ahsanullah University of Science and Technology (AUST)
#Dhaka University of Engineering & Technology (DUET)
#Hajee Mohammad Danesh Science & Technology University (HSTU)
#Mawlana Bhashani Science & Technology University (MBSTU)
Job Sector
একজন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারের কাজ কি?
একজন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারের মুল কাজ হলো : ” Production, Quality Control and finally Maintenance ” অর্থাৎ উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণ।
সারা বিশ্ব আজ প্রযুক্তিনির্ভর। এতক্ষণে আশা করি বুঝে ফেলেছো পুরো পৃথিবী জুড়ে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ঠিক কতোটা প্রয়োজনীয়। একদম সহজ ভাষায় বললে, তুমি যে টেকনিকাল কাজই করো, সেটাতে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং লাগবেই। তাই সারা বিশ্বে দক্ষ মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারদের ডিমান্ড ও অনেক বেশি!
চলো,মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারদের জব সেক্টর দেখে আসি :
Automobile Industry
Aerospace Industry
Materials and Metallurgy Industry
Railways
Refrigeration and Air Conditioning Sector
Manufacture Industry
Petroleum and Mining Sector
Supply Chain Management
Robotics and Mechatronics
Power Sector
– Generation
– Transmission
Mechanical Designing
Chemical Industry
Ceramics Industry
Defense (Army, Air Force, Navy)
Nuclear Sector
Fossil Fuels and Renewable Energy
এছাড়া বেশ কিছু “Electrical & IPE” সম্পর্কিত চাকরিতেও মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ দেয়া হয়।
বাংলাদেশের পাওয়ার সেক্টরে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার দের চাহিদা অনেক বেশি। এসব পাওয়ার প্ল্যান্টে অনেক বেশি স্যালারিতেই মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারদের রিক্রুট করা হয়। আর প্রাইভেট সেক্টরে, বিশেষ করে যেগুলোতে ইন্ডাস্ট্রি আছে, সেখানে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার লাগবেই। এখানে, একটা কথা বলে নেয়া ভালো যে এত এত জব সেক্টর থাকা স্বত্তেও অনেক সময়ই লোকমুখে শোনা যায় দেশে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর চাকরি নেই।
সেক্টর যত বেশিই হোক,মেকানিকাল সম্পর্কিত চাকরিগুলো অনেক বেশি কমপ্লেক্স। তার জন্য নিজেকে যথেষ্ট পরিমাণ স্কিলফুল হতে হবে। এত এত মেশিনের অভ্যন্তরীণ কাঠামো বোঝা, টারবাইন, বয়লার,ইঞ্জিনের মতো এত কমপ্লেক্স সব বিষয় আয়ত্ত করা মোটেই সহজ কোনো কাজ না।চাকরি অবশ্যই আছে কিন্তু সেটার জন্য তোমাকে একজন দক্ষ মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে।
Research and Higher Studies
আজকের এই প্রযুক্তির যুগে রিসার্চ বা গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।
মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ গবেষণার জন্য টপিকের কোনো শেষ নেই। Engine Efficiency, Automation, Energy, Fluid Mechanics, Machine Efficiency থেকে শুরু করে টপিকের কোনো অভাব নেই। তুমি চাইলেই এখন ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সেটা নিয়ে কাজ শুরু করে দিতে পারবা। আর হ্যা, আজকের এই আধুনিক বিশ্ব, এই সবকিছুই গবেষণার ফল। কে জানে এই তুমিই আজ থেকে ১৫-২০ বছর পর চমকে দেয়া কোনো কিছু উদ্ভাবন করে ফেললা? হতেই পারে।
ছোটবেলা থেকেই তুমি ভ্রমণপিপাসু ছিলা। তোমার ইচ্ছে কোনো একদিন ইউরোপ-আমেরিকার কোনো দেশে নিজেকে আবিষ্কার করা। প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের সামনে গিয়ে মুগ্ধ হয়ে শুধু কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকা! স্বপ্নের মতো না ব্যাপারটি?
বাংলাদেশে বেড়ে ওঠা ছেলেমেয়েদের একটি বড় অংশ এমন কোনো না কোনো স্বপ্ন দেখে। অনেকেই স্বপ্নগুলো পুরণ ও করছে। কিন্তু কিভাবে?
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উত্তর একটাই। সেটা উচ্চশিক্ষা।
উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যেতে চাইলে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং খুবই সুন্দর চয়েস। ইউরোপ, আমেরিকাতে এর চাহিদা প্রখর। বাংলাদেশে স্নাতক শেষ করে প্রত্যেকবছরই একটি বড় অংশ পারি জমাচ্ছে জার্মানি, আমেরিকা, জাপান,ক্যানাডা, রাশিয়া সহ ইউরোপ, আমেরিকার অনেকগুলো দেশে। বিশেষ করে জার্মানিকে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারদের স্বর্গ বলা হয়।
উচ্চশিক্ষা শেষ করার পর একটি বিশাল অংশ বিদেশেই থেক যায়। বিদেশে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর জব সেক্টর দেশের তুলনায় অনেক বেশি বিস্তৃত এবং সেখানকার স্যালারী, সুযোগ সুবিধা দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এজন্য ক্যারিয়ার হিসেবে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়াররা এটিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন।
Why did I choose Mechanical Engineering?
ছোটবেলা থেকেই প্রচুর কম্পিউটার গেইমস খেলতাম। আমার গেইমসের হাতেখড়ি ” Need for Speed Most Wanted ” দিয়ে। সেই থেকে গাড়ি নিয়ে প্রচুর আগ্রহ জাগে। তারপর ক্লাস সেভেনে থাকতে একদিন “Fast & Furious Tokyo Drift” মুভিটি দেখে ফেলি। Tokyo Drift এই প্রথম Ford Mustang, Nissan GT-R এর মতো সব গাড়ি। সেই থেকে মনে এক স্বপ্ন জাগে, কোনো একদিন আমিও এমন সব গাড়ি বানাবো। কলেজে থাকতে “Formula 1” দেখা শুরু করি। এরপর থেকেই মনের মধ্যে “অটোমোবাইল” এই বিষয়টি গেঁথে যায়। গাড়ি নিয়ে এত এত কিছু করা সম্ভব! এটিই আমার জন্য সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংকে বেছে নেয়ার জন্য।
Conclusion
মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং যতটা বিস্তৃত ততটাই মজার একটি বিষয় এবং এটি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অতিমাত্রায় জড়িত। যার কারণে আমাদের মাঝে অনেকেরই ইচ্ছে থাকে এ বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করার। অতি উৎসাহী হয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সাব্জেক্ট বেছে নেয়ার সময় অনেকেই মেকানিকাল নেয় এবং শেষমেশ দেখা যায় তারা ভুক্তভোগী হয়। মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনেক আকর্ষণীয় বিষয় কিন্তু সবার জন্য এটি না।
৪ বছরে মোট ৮ টি সেমিস্টারে এত জটিল সব কোর্স আয়ত্ত করা কোনো সহজ কাজ নয়। মেকানিকালের আউটপুট দেখে যতটুকু সহজ মনে হয়, এর অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপ ঠিক কতটা জটিল তা লিখে বুঝানো সম্ভব নয়। মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ তোমাকে অনেক বেশি পরিশ্রমী হতে হবে এবং তোমার চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।
মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে তোমাদের কিছু ধারণা দেয়ার চেষ্টা করলাম। আশা করি তোমরা কিছুটা হলেও এই বিষয়টি নিয়ে জানতে পারলা।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পা দেয়ার আগে কখনোই তাড়াহুরো করে কোনো সাব্জেক্ট বেছে নেয়া উচিত নয়। তুমি যে বিষয়ে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক, অবশ্যই সেটি নিয়ে যথেষ্ট যাচাই বাচাই করে তবেই তোমার সিদ্ধান্তটি নিয়ো।
তোমাদের জন্য অসংখ্য শুভকামনা। তোমাদের সামনের দিনগুলি সুন্দর হোক।
Sadman Taqi Fahim
Department of Mechanical Engineering,
Rajshahi University of Engineering and Technology
You may also like
